দুঃশাসন (Duswashan)

by | Mar 20, 2020 | Guest Blog, Social Trends

ভরা সভায় সেদিন নীরব বিচারকমণ্ডলী। অন্দরমহল থেকে যখন বিত্রস্ত পাঞ্চালীর বিস্রস্ত কেশ-আকর্ষণ করে হিঁচড়ে টেনে এনে ফেলল সভার মাঝে, — যখন আত্মীয়-অনাত্মীয় পুরুষদের নির্লজ্জ চোখের সামনে বিবসনা করল কুলবধূ দ্রৌপদীকে, তখন দুঃশাসন কী একা ছিল? সেদিন পাঞ্চালী বিবস্ত্রা হয়েছিল সমগ্র পুরুষ জাতির সামনে। তাই বিচারসভা ছিল অন্ধ, মূক, বধির।

          হয়তো এমন বীর-পুত্রদের জন্ম দিয়েছিলেন বলে লজ্জায় দুঃখে মাথা নত হয়েছিল গান্ধারীর। অথবা হয়তো ছেলেদের ‘বীরত্ব’ দেখে গর্বিতই হয়েছিলেন।

          হয়তো সেই জন্যই, আজও প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে গান্ধারীরা জন্ম দিয়ে চলেছে অসংখ্য দুঃশাসনদের। তারা প্রতিদিন লজ্জাহরণ করে চলেছে পাঞ্চালীদের। এই গান্ধারীরা কী গর্ব বোধ করেন তাঁদের দুঃশাসনদের কুকর্মের জন্য? লজ্জা পান?

          শিকার, মৃগয়া— নৃশংসতার মধ্যে জয়ের উল্লাস! ধর্ষণ, অ্যাসিড-আক্রমণ—আজকের দিনের মৃগয়া। পশু শিকারীর ক্ষেত্রে সবাই এগিয়ে এসে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নারী-শিকারের সময় বছরের পর বছর ধরে লাঞ্ছনা সয়ে চলে সেই নারী এবং তার পরিবার। প্রতিবাদের সাময়িক ঝড় ওঠে, আবার স্বাভাবিক ভাবেই নেমে যায়, সংবাদপত্রগুলিতে ‘জরুরি’ সব খবরের ফাঁকে এ খবরও ছেপে বেরোয়—তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় অন্য খবরকে জায়গা করে দিয়ে। কিন্তু বছরের পর বছর নিয়ম করে আদালতে হাজিরা দিয়ে যাবে এই নির্যাতিতাদের পরিবার। নির্ভয়ার পরিবারের মত।

          ২০১২-র ডিসেম্বর মাসে যে লড়াই শুরু হয়েছিল, তা অনেক আইনি বাক-বিতণ্ডার পরে শেষ হবার কথা হয়েছিল ২২শে জানুয়ারি ২০২০-তে। বারবার পিছিয়ে পিছিয়ে এই তারিখে স্থির হয়েছিল চার আসামীর ফাঁসির। কিন্তু আবার সেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে পরার খেলা। আবার পিছিয়ে গেল ফাঁসি। যারা একজন নারীকে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল, তাদের মৃত্যুদণ্ড হতে এত দেরি কেন? এত বছর ধরে এই আইনের লড়াই চলবে কেন?

          মহাভারতের দুঃশাসনের শেষ পর্যন্ত বিচার হয়েছিল, দ্রৌপদী তার রক্তে চুল ধুয়ে তার লাঞ্ছনার প্রতিশোধের আগুন নেভাতে পেরেছিল। মৃতা নির্ভয়ার মায়ের শূন্য বুক কী একটুও ঠাণ্ডা হবে? এই দুঃশাসনদের শাস্তিতে?

ছোট প্রতিবন্ধ – স্বাতী মিত্র (শিক্ষিকা, সাউথ পয়েন্ট স্কুল, কলকাতা)

Short essay by Swati Mitra (Teacher, South Point School)

This is being published on the day the rapists of Nirbhaya (brutally raped on 16 December 2012) have been, at last, hanged.